টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল যে প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি, সেটি মানছেন তিনিও। কিন্তু রাসেল ডমিঙ্গোর মতে, বাংলাদেশ এতটাও খারাপ খেলেনি যে তাদের সমালোচনার শূলে চড়াতে হবে। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেটারদের ঢালই হলেন বাংলাদেশ দলের কোচ। সংবাদ সম্মেলনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো এখানে—
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের আগে দলের অবস্থা
শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই নয়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও আমরাই বেশির ভাগ সময় ভালো অবস্থানে ছিলাম। কিন্তু দু–একটা মারাত্মক ভুলের জন্য আমরা হেরে যাই। গত কয়েকটা দিন খুব কঠিন গেছে। ছেলেরা জানে তাদের নিয়ে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি, সংবাদমাধ্যমেরও অনেক আগ্রহ। তারাও হয়তো এখন বুঝতে পারছে কিছু মানুষকে তারা কষ্ট দিয়েছে। মানসিকভাবে তাদের উজ্জীবিত করাটা তাই কঠিন হবে। তবে তারা দেশের জন্য খেলবে। সাদা দাগটা পেরিয়ে মাঠে ঢুকে যাওয়ার পর তারা শতভাগ দিয়েই খেলবে।
এই ম্যাচে নিজেদের ফিরে পেতে কী পরিকল্পনা বাংলাদেশের
এখন পর্যন্ত আমাদের ফলাফল ভালো নয়। তিনটা ম্যাচই আমরা খেলেছি সাবেক চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে। তিনটাই ছিল ভালো দল। তবু এসব ম্যাচ থেকে আমাদের ইতিবাচক দিকটাই নিতে হবে, বিশেষ করে যেসব জায়গায় ভালো করেছি, সেসব মনে রাখতে হবে। চাপের মধ্যেও আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভালো কিছু করেছি। তবে ব্যাট হাতে আমরা কাজটা শেষ করে আসতে পারিনি।
বাইরের আলোচনা–সমালোচনা নিয়ে
আমি সৌভাগ্যবান যে আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেই। সংবাদমাধ্যমে আসা খবরও আমি খুব বেশি পড়ি না। আমি যখন মাছ ধরতাম তখনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি থাকতাম। ক্রিকেট নিয়ে অতটা থাকি না ওখানে। কাজেই আমি জানিও না সেখানে কী কথা হচ্ছে।
তবে শরীফুল, নাঈমদের মতো আমাদের তরুণ খেলোয়াড়দের অনেক ভালো পারফরম্যান্সও আছে। ইতিবাচকভাবে নেওয়ার অনেক কিছুই আছে। কাজগুলো ঠিকঠাকভাবে না হলে এসব ইতিবাচক দিকও মানুষের দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। আমি তো বলি বয়সের দিক দিয়ে এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে তরুণ দল আমরা।
দলে দু–একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় থাকায় আমরা হয়তো সেটা ভুলে গেছি। ফলাফল ভালো না হলেও ছেলেরা ওই ম্যাচগুলোতে যেভাবে লড়েছে, আমি তাতে গর্বিত। আমি নিশ্চিত তারাও অনেক কিছু শিখেছে এ থেকে।
গত ম্যাচে পোলার্ডের মাঠ ছেড়ে যাওয়া এবং আবার ফেরা নিয়ে
সত্যি বলতে কি, আমিও জানি না এর কারণ কী ছিল। জানি না কেন সে অবসর নিয়েছিল। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যেও কোনো আলোচনা হয়নি।
কোথায় ভয়ডরহীন ক্রিকেট?
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ দিকে আমাদের ৫১ বলে ২৪ রান লাগত। এ রকম যে হবে ম্যাচের শুরুতেই, যদি কেউ সেটা বলে দিত, তাহলে ব্যাপারটা অন্য রকম হতো। একইভাবে ১৭০ রানের জবাবে আমরা ৭০ রানে শ্রীলঙ্কার ৪ উইকেট ফেলে দিয়েছিলাম। ম্যাচের শুরুতেই যদি জানতাম এ রকম হবে, তাহলেও পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।
আসলে সিদ্ধান্তটা শেষ পর্যন্ত খেলার মাঠেই নিতে হয়। এখানে ভুল বা ঠিক বলে কিছু নেই। তবে হ্যাঁ, ও রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুহূর্তে আমরা হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে কিছু ভুল করেছি, চাপ সামলাতে পারিনি। এই জিনিসগুলোই আমাদের পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।
লিটনকে মিডল অর্ডারে ভাবা যেতে পারে কি না
একটা সময়ে আমরাও এ রকম ভেবেছিলাম। কিন্তু সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা যখন থাকে, কাজটা তো সহজ নয়। এখন তো আফিফও ওখানে ভালো খেলছে। লিটন এখন কিছুটা চাপে আছে। হয়তো তিনে বা চারে নামিয়ে আনলে নতুন বল খেলার চাপটা ওর ওপর থেকে কমে যাবে।
দলের সঙ্গে আরও খেলোয়াড় না রাখাটা ভুল হলো কি না
দেখুন কোনো কিছু আগে থেকে বুঝতে পারাটা দারুণ ব্যাপার। আমরা এখানে এসেছি দুইজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান, দুইজন অতিরিক্ত পেস বোলার এবং দুইজন অতিরিক্ত অফ স্পিনার নিয়ে। এমনকি দলে উইকেটকিপারও দুইজন। কাজেই আমি এখনো মনে করি শেষ দুই ম্যাচে ঘাটতি পোষানোর মতো খেলোয়াড় আমাদের আছে।
সোহান (নুরুল হাসান) কালও (আজ) ফিট হবে না। সে জন্য বিকল্প ব্যাটসম্যান হিসেবে সৌম্য, শামীম আছে। একাদশে তারা দুজনই থাকবে। কাজেই আমি মনে করি আমাদের আরও বিকল্প খেলোয়াড় দরকার ছিল।
শেষ দুই ম্যাচ থেকে কী পাওয়ার আছে
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ এর আগে শুধু একটা ম্যাচই জিতেছে। কাজেই রেকর্ডটা ভালো করে নেওয়ার সুযোগ আছে আমাদের সামনে। ম্যাচগুলো জেতার চেষ্টা করা এবং জেতা আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নেবে। এই দুই ম্যাচে তাই অনেক কিছুই করার আছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচের আগে আপাতত আমার পুরো মনোযোগ কালকের (আজ) ম্যাচের দিকে।
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কেমন অভিজ্ঞতা হলো
আন্তর্জাতিক খেলাধুলায় ফলাফলটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত ১২ মাসে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে দলটার জয়ের হারের যদি তাকান, সেটা কিন্তু অসাধারণ। বড় কিছু সিরিজ জিতেছি আমরা। আমি মনে করি সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলের কাছে অল্পের জন্য হেরে যাওয়া নিয়ে এত সমালোচনা হওয়াটা দলের প্রতি অন্যায়।
টি–টোয়েন্টি সংস্করণে উন্নতির সুযোগ সব সময়ই থাকে। তারপরও দেখবেন আমাদের তরুণ কিছু খেলোয়াড় এগিয়ে এসেছে। বড় দলের বিপক্ষে তারা ভালো খেলছে।